বাজারে পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এরইমধ্যে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে তৈরি হচ্ছে আরেক পরিবেশবান্ধব ব্যাগ। তবে এটি পচনশীল। পচে তৈরি হবে জৈব সার। যা পরিবেশের ক্ষতি না করে বরং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ভুট্টা ও উদ্ভিদজাত ক্যামিকাল দারা তৈরি এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগ সাধারণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় এই পলিথিন ব্যাগ ধারণ ক্ষমতা ও টেকসই বেশি। ফলে এটা ব্যবহারও করা যাবে দীর্ঘদিন। পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক হওয়ায় ব্যবহার করা যাবে বড় বড় শপিংমলেও।
গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার কড়পাড়া ইউনিয়নের তারগ্রাম এলাকায় অবস্থিত জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানে উদপাদন শুরু হয়েছে পচনশীল এ বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগের। গেল সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে এ উৎপাদন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে একটণ পচনশীল পলিথিন ব্যাগ। ৩ টি সাইজের শপিংব্যাগে ১ কেজি থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল বহন করা সম্ভব যাবে।
আরও পড়ুনঃ গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির
নিষিদ্ধ পলিথিনের তুলনায় পরিবেশবান্ধব এ ব্যাগ কিনতে খরচ তুলনামুলক কিছুটা বেশি। ২ পিচ ১ কেজি মালামাল বহনকরা সাইজের ব্যাগের দাম ১ টাকা এবং ২০ কেজির কেজি বহনকারী সাইজের ব্যাগের দাম ২০ টাকা প্রতি পিস পড়বে।
কড়পাড়া ইউনিয়নের তারগ্রাম এলাকায় জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তিনস্তরের অত্যাধুনিক মেশিনে উৎপাদন হচ্ছে এই পরিবেশবান্ধব পলিথিন ব্যাগ । এ মেশিনে প্রতিদিন এক টন শপিংব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন বাজারে।
কারখানাটির মেশিন অপারেটর মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পরিবেশবান্ধব বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগের ‘র’ ম্যাটেরিয়াল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভুট্টার নির্যাস ও উদ্ভিদজাত পলিমার দিয়ে তৈরি এ কাঁচামাল প্রতি কেজি ৪৫০ – ৫০০ টাকা দরে কিনতে হয়। জানালেন তিনিও নায্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রধান অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন৷।
কোম্পানি ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ বান্ধব এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগ যেমন পরিবেশ কে রক্ষা করবে তেমনি পচে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে। মাত্র শুরু করলেও আমরা সাধারণের বেশ সাড়া পাচ্ছি। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় আমরাও উৎপাদনে আশাবাদী হচ্ছি। বর্তমানে একটণ অর্থাৎ একহাজার কেজি উৎপাদন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পরিক্ষার জন্য স্যাম্পল বুয়েটে পাঠিয়েছি। এছাড়াও নিজস্ব ল্যাবে পরিক্ষা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ পরিক্ষায় সফল হয়েছি। এটি মাটির সংস্পর্শে আসার তিন থেকে মাচ মাছের মধ্যে পচে মাটিতে রূপ নেবে। তবে সেটি জৈব সার হয়ে মাটির উর্বরতা আরো বাড়াবে।
কোম্পানি আরেকজন কর্মকর্তা বলেন,কিছুদিন আগে শুনেছি পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্যাগ। সেটি পানি লাগলে ভিজে যায়। তবে এই পচনশীল পলিথিন ব্যাগ পানিও বহন করা যাবে। অন্যন্যা ব্যাগের তুলনায় এই ব্যাগের তুলনায় এটি ধারণক্ষমতা ও টেকসই বেশি। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
কোম্পানির মালিক কামরুজ্জামান কামাল সিকদার বলেন, সরকারের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পলিথিনের বিকল্প হিসাবে আমরা বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগউৎপাদন শুরু করেছি। এটি পলিথিনের মতই তবে পচনশীল। শুধু তাই নয়।পছে মাটিতে জৈব সার তৈরি হবে। এটি সাধারণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় কিনতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এটি পরিবেশবান্ধব। তাই দেশ ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে সবাই এটি ব্যবহার করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের পর দেশে বায়ো – ডিগ্রেডেবল ব্যাগ উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেটি পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সদর উপজেলার এই কারখানাটি আমাদের নলেজে নেই। তারা যদি ভুট্টা থেকে তৈরি করে থাকে তাহলে ঠিক আছে ওইটি বায়ো ডিগ্রেডেবল, তবে ভুট্টার পাশাপাশি ক্যামিক্যাল পরিমাণ মত হতে হবে। তা না হলে সেটি বায়ো ডিগ্রেডেবল বলে বিবেচিত হবে না। কারখানাটি সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তবে যেহেতু জেনেছি আমরা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের নিজস্ব ল্যাবে পরিক্ষা করে দেখব।
নিউজ রুম