০৯:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে নারীর কাছে চাঁদা দাবি বিএনপি নেতার, কলরেকর্ড ফাঁস

গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে অসহায় নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতার নাম নিয়ামুল হোসেন মিলন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ যুব বিষয়ক সম্পাদক।

কাশিয়ানী থানার ওসি এবং গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের ( এসপি) নাম ভাঙিয়ে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার একটি কল রেকর্ড হাতে এসেছে গণমাধ্যমের হাতে। ৫ মিনিটের ওই কলরেকর্ডে চাঁদা দাবি করা ওই নেতাকে বলতে শোনা গেছে, সকাল ১০ টার মধ্যে আড়াই লাখ টাকা না দিলে মামলা হয়ে যাবে। এ নিয়ে বিএনপির এই নেতার কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। তবে দোষ চাপিয়েছেন পুলিশের সাব- ইন্সপেক্টরের ঘাড়ে। আর জেলা  পুলিশ বলছে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল এক নারীর

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ ই ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলা মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা – রামপুর গ্রামের মুত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সাথে থেকে প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় কাশিয়ানী থানা পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। তবে কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।

উদ্ধারের পর জানা যায় প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছে ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়া।  ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়  মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করছেন ওই বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন।

ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে ওই বিএনপির নেতার চাঁদা দাবির একটি  কল রেকর্ড হাতে এসেছে গণমাধ্যমের হাতে।  যেখানে ওই বিএনপি নেতা কে বলতে শোনা যাচ্ছে, দারোগার কাছে  আমি আপনার ছেলে সহ মোট দুইজনের কথা বলছি। আড়াইলাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি, এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে তারা আ্যকশনে যাইতে বলছে। তিনজন কে আড়াই লাখ টাকা ছাড়া হবে না।  আজকে সকাল ১০ টার ভিতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে। এসময় অপর প্রান্ত থেকে মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষি।  আমি আড়াই লাখ টাকা  কোহানে ( কোথায়)  পাবো। আমার ভিটা বাড়ী বেচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি একলাখ টাকা দিতে পারবো।এসময় ওই বিএনপি নেতা বলেন, মোবাইল এতকথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।

এছাড়াও দর কষাকষি নিয়ে আরও কথা বলতে শোনা যায়।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে হাতকড়া নিয়ে থানা থেকে পালালো আসামী, ২ পুলিশ বরখাস্ত

এবিষয়ে জানতে বুধবার সকালে মাহাবুর মিয়ার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এসময় দেখা হয় মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়ার সাথে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় সে পুলিশের সাথে ছিল। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল হোসেন মিলন মাহাবুরের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করে  ওই বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন বলেন, প্রতিদিন ওই মহিলা আমার বাড়ি এসে কান্দে। আমি কি করবো। পরে মানবিক কারনে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলছে ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে মামলা যেন না হয়।  সেইটা দিতে বলেন মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে আমি তাই তাদের কাছে বলছি।  আমি নিজের কথা বলি নাই।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে ৩ ঘন্টা ধরে বিএনপির দু গ্রুপের সংঘর্ষ চলছে

এবিষয়ে জানতে কোটালীপাড়ার থানার সাব – ইন্সপেক্টর ( সাবেক কাশিয়ানী থানা )  গৌতম কুমার সেন বলেন, মিলন সাহেব কে চিনি আমি। তবে তার সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোন বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়তো নিজে ফেসে গিয়ে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে।

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. শফিউদ্দিন বলেন, আমরা প্রাইভেটকার উদ্ধারের পর মালিক খুঁজেছি। না পেয়ে আমরা জব্দ দেখিয়ে আদালত পাঠিয়েছি। এখানে কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। হয়তো এসআইয়ের সাথে ওই বিএনপি নেতার কথা হতে পারে। তবে ঘটনার কিছুই আমি জানি না।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ রুম 

footer-area { background: #024f75; }

গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে নারীর কাছে চাঁদা দাবি বিএনপি নেতার, কলরেকর্ড ফাঁস

প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে অসহায় নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতার নাম নিয়ামুল হোসেন মিলন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ যুব বিষয়ক সম্পাদক।

কাশিয়ানী থানার ওসি এবং গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের ( এসপি) নাম ভাঙিয়ে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার একটি কল রেকর্ড হাতে এসেছে গণমাধ্যমের হাতে। ৫ মিনিটের ওই কলরেকর্ডে চাঁদা দাবি করা ওই নেতাকে বলতে শোনা গেছে, সকাল ১০ টার মধ্যে আড়াই লাখ টাকা না দিলে মামলা হয়ে যাবে। এ নিয়ে বিএনপির এই নেতার কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। তবে দোষ চাপিয়েছেন পুলিশের সাব- ইন্সপেক্টরের ঘাড়ে। আর জেলা  পুলিশ বলছে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল এক নারীর

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ ই ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলা মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা – রামপুর গ্রামের মুত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সাথে থেকে প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় কাশিয়ানী থানা পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। তবে কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।

উদ্ধারের পর জানা যায় প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছে ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়া।  ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়  মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করছেন ওই বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন।

ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে ওই বিএনপির নেতার চাঁদা দাবির একটি  কল রেকর্ড হাতে এসেছে গণমাধ্যমের হাতে।  যেখানে ওই বিএনপি নেতা কে বলতে শোনা যাচ্ছে, দারোগার কাছে  আমি আপনার ছেলে সহ মোট দুইজনের কথা বলছি। আড়াইলাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি, এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে তারা আ্যকশনে যাইতে বলছে। তিনজন কে আড়াই লাখ টাকা ছাড়া হবে না।  আজকে সকাল ১০ টার ভিতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে। এসময় অপর প্রান্ত থেকে মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষি।  আমি আড়াই লাখ টাকা  কোহানে ( কোথায়)  পাবো। আমার ভিটা বাড়ী বেচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি একলাখ টাকা দিতে পারবো।এসময় ওই বিএনপি নেতা বলেন, মোবাইল এতকথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।

এছাড়াও দর কষাকষি নিয়ে আরও কথা বলতে শোনা যায়।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে হাতকড়া নিয়ে থানা থেকে পালালো আসামী, ২ পুলিশ বরখাস্ত

এবিষয়ে জানতে বুধবার সকালে মাহাবুর মিয়ার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এসময় দেখা হয় মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়ার সাথে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় সে পুলিশের সাথে ছিল। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল হোসেন মিলন মাহাবুরের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করে  ওই বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন বলেন, প্রতিদিন ওই মহিলা আমার বাড়ি এসে কান্দে। আমি কি করবো। পরে মানবিক কারনে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলছে ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে মামলা যেন না হয়।  সেইটা দিতে বলেন মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে আমি তাই তাদের কাছে বলছি।  আমি নিজের কথা বলি নাই।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে ৩ ঘন্টা ধরে বিএনপির দু গ্রুপের সংঘর্ষ চলছে

এবিষয়ে জানতে কোটালীপাড়ার থানার সাব – ইন্সপেক্টর ( সাবেক কাশিয়ানী থানা )  গৌতম কুমার সেন বলেন, মিলন সাহেব কে চিনি আমি। তবে তার সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোন বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়তো নিজে ফেসে গিয়ে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে।

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. শফিউদ্দিন বলেন, আমরা প্রাইভেটকার উদ্ধারের পর মালিক খুঁজেছি। না পেয়ে আমরা জব্দ দেখিয়ে আদালত পাঠিয়েছি। এখানে কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। হয়তো এসআইয়ের সাথে ওই বিএনপি নেতার কথা হতে পারে। তবে ঘটনার কিছুই আমি জানি না।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ রুম