১২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

সন্তানদের আর্তনাদে খুলে গেল জেলের তালা !

কারামুক্ত হয়ে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সেই দিনমজুর জামাল মিয়া। জামাল মিয়ার মা হারা  সন্তানদের আর্তনাদে কেপেছে রাষ্ট্র, বিচারবিভাগ। ভেঙেছে জেলের তালা! অবশেষে সেই জামাল মিয়া কারামুক্ত হয়ে এখন চলাফেরা করছে স্বাধীনভাবে। এদিকে এক সপ্তাহ পর বাবাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্নহারা দিন মজুর জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ  ও বড় মেয়ে ফারিয়া।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গোপালগঞ্জের সেই দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন দেন  আদালত। এতে করে চার বাচ্চা ফিরে পেল তার বাবাকে।

১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরের গোপালগঞ্জ  অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের  বিচারক ফিরোজ মামুন জামাল মিয়াকে জামিন দেন। এদিন বিকালে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। দিনমজুর জামাল মিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেছেন গোপালগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী এ্যড. শারমিন জাহান ।

জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী  এ্যডভোকেট  শারমিন জাহান বলেন, জেলা লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন আবেদন করি। আদালতে বিচারক আমাদের কথা বলার আগেই নথি হাতে পেয়ে জামিন মঞ্জুর করেন।হয়তো বিচারক আগে থেকেই জামাল মিয়ার চার বাচ্চার সংবাদটির বিষয়ে অবগত ছিলেন।মানবিক দিক থেকে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।  এতে করে ওই চার বাচ্চা ফিরে পেল তার বাবাকে।

কারামুক্ত হয়ে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সেই দিনমজুর জামাল মিয়া।

 

দিনমজুর জামাল মিয়া বলেন, আমি একসপ্তাহ জেল খেটে যে কষ্ট পাইছি তা আমার সন্তানদের বুকে নিয়ে সব দুর হয়ে গেছে। আমার সন্তানদের আর্তনাদ আমাকে জেলখানা থেকে বের করে আনছে। এখন একটাই লক্ষ্য তাদের যেন মানুষের মত মানুষ করতে পারি। তিনি আরও বলেন, যে সকল গণমাধ্যম আমার এবং আমার সন্তানদের পাশে দাড়িয়েছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এঘটনায় আবারো প্রমাণ হলো দেশে মানুষের কথা বলার এখনো একটি মাধ্যম আছে।

 

 

জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ বলেন, আমার বাবাকে কাছে পাইয়ে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমার বাবা না থাকায় আমরা তিনদিন না খেয়ে ছিলাম। আমাদের নিয়ে নিউজ হওয়ার পর আমাদের অনেক সাহায্য আসছে। আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনতে সাংবাদিকেরা অনেক কষ্ট করছে।

 

 

জামাল মিয়ার বড় মেয়ে ফারিয়া বলেন, অনেকদিন পর বাবার কোলে ঘুমায়ছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার বাবা আমাদের কাছে থাকুক।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করল নেপাল

স্থানীয় মিরাজ নামে এক যুবক বলেন, জামাল মিয়ার পাশে সাংবাদিকেরা যেভাবে দাড়িয়েছে এটা ইতিহাস। আমরা ভাবিও নাই জামাল মিয়াকে ছাড়াতে সারাদেশের মানুষ দাবি তুলবেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকদের জন্য।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার  সকালে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই ঘটনা নজরে নিয়ে শিশুদের দেখভাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও গোপালগঞ্জের ডিসিকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে

 

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ।

 

হাইকোর্টের নির্দেশের পরই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে  জামাল মিয়ার চার বাচ্চাদের দেখতে ছুটে যায় কোটালীপাড়া  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার। এসময় চার বাচ্চা বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী সহ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

 

এসময় উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান স্যার বিষয়টি অবগত আছে। তার অনুমতিক্রমে আজকে আমরা প্রাথমিকভাবে সাজ্জাদ সহ তাদের চার ভাই বোনের জন্য দশ হাজার টাকা ও কিছু শিশু সামগ্রী নিয়ে আসছি। একটা কথাই বলবো সাজ্জাদ এবং তার বোনদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সব সময় আছে।

 

খোঁজ নিয়ো জানাগেছে, জামাল মিয়া পেশায় একজন দিনমজুর।  গত একমাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালনপালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার।

 

এ অবস্থায় গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া  সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

নিউজ রুম/এমবি

footer-area { background: #024f75; }

সন্তানদের আর্তনাদে খুলে গেল জেলের তালা !

প্রকাশিত : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কারামুক্ত হয়ে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সেই দিনমজুর জামাল মিয়া। জামাল মিয়ার মা হারা  সন্তানদের আর্তনাদে কেপেছে রাষ্ট্র, বিচারবিভাগ। ভেঙেছে জেলের তালা! অবশেষে সেই জামাল মিয়া কারামুক্ত হয়ে এখন চলাফেরা করছে স্বাধীনভাবে। এদিকে এক সপ্তাহ পর বাবাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্নহারা দিন মজুর জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ  ও বড় মেয়ে ফারিয়া।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গোপালগঞ্জের সেই দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন দেন  আদালত। এতে করে চার বাচ্চা ফিরে পেল তার বাবাকে।

১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরের গোপালগঞ্জ  অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের  বিচারক ফিরোজ মামুন জামাল মিয়াকে জামিন দেন। এদিন বিকালে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। দিনমজুর জামাল মিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেছেন গোপালগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী এ্যড. শারমিন জাহান ।

জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী  এ্যডভোকেট  শারমিন জাহান বলেন, জেলা লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন আবেদন করি। আদালতে বিচারক আমাদের কথা বলার আগেই নথি হাতে পেয়ে জামিন মঞ্জুর করেন।হয়তো বিচারক আগে থেকেই জামাল মিয়ার চার বাচ্চার সংবাদটির বিষয়ে অবগত ছিলেন।মানবিক দিক থেকে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।  এতে করে ওই চার বাচ্চা ফিরে পেল তার বাবাকে।

কারামুক্ত হয়ে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সেই দিনমজুর জামাল মিয়া।

 

দিনমজুর জামাল মিয়া বলেন, আমি একসপ্তাহ জেল খেটে যে কষ্ট পাইছি তা আমার সন্তানদের বুকে নিয়ে সব দুর হয়ে গেছে। আমার সন্তানদের আর্তনাদ আমাকে জেলখানা থেকে বের করে আনছে। এখন একটাই লক্ষ্য তাদের যেন মানুষের মত মানুষ করতে পারি। তিনি আরও বলেন, যে সকল গণমাধ্যম আমার এবং আমার সন্তানদের পাশে দাড়িয়েছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এঘটনায় আবারো প্রমাণ হলো দেশে মানুষের কথা বলার এখনো একটি মাধ্যম আছে।

 

 

জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ বলেন, আমার বাবাকে কাছে পাইয়ে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমার বাবা না থাকায় আমরা তিনদিন না খেয়ে ছিলাম। আমাদের নিয়ে নিউজ হওয়ার পর আমাদের অনেক সাহায্য আসছে। আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনতে সাংবাদিকেরা অনেক কষ্ট করছে।

 

 

জামাল মিয়ার বড় মেয়ে ফারিয়া বলেন, অনেকদিন পর বাবার কোলে ঘুমায়ছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার বাবা আমাদের কাছে থাকুক।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করল নেপাল

স্থানীয় মিরাজ নামে এক যুবক বলেন, জামাল মিয়ার পাশে সাংবাদিকেরা যেভাবে দাড়িয়েছে এটা ইতিহাস। আমরা ভাবিও নাই জামাল মিয়াকে ছাড়াতে সারাদেশের মানুষ দাবি তুলবেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকদের জন্য।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার  সকালে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই ঘটনা নজরে নিয়ে শিশুদের দেখভাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও গোপালগঞ্জের ডিসিকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে

 

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ।

 

হাইকোর্টের নির্দেশের পরই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে  জামাল মিয়ার চার বাচ্চাদের দেখতে ছুটে যায় কোটালীপাড়া  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার। এসময় চার বাচ্চা বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী সহ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

 

এসময় উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান স্যার বিষয়টি অবগত আছে। তার অনুমতিক্রমে আজকে আমরা প্রাথমিকভাবে সাজ্জাদ সহ তাদের চার ভাই বোনের জন্য দশ হাজার টাকা ও কিছু শিশু সামগ্রী নিয়ে আসছি। একটা কথাই বলবো সাজ্জাদ এবং তার বোনদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সব সময় আছে।

 

খোঁজ নিয়ো জানাগেছে, জামাল মিয়া পেশায় একজন দিনমজুর।  গত একমাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালনপালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার।

 

এ অবস্থায় গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া  সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

নিউজ রুম/এমবি