গত ৫ আগস্টের পর গোপালগঞ্জ শহরে ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুইটি ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবী করা হচ্ছে। এতে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তি। দুইটি কার্যালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বহিষ্কৃত ও পদত্যাগকারী সাবেক জেলা বিএনপির দুই সভাপতি।আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে অফিস দুইটিতে তারা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মীরা।তারা বলছেন, বর্তমান জেলা বিএনপি সহ সহযোগী কোন সংগঠন ওই দুই নেতার রাজনীতি সমর্থন করে না। আর জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক বলছে, বর্তমানে জেলা বিএনপির কোন কার্যালয় নেই, থানা বিএনপির কার্যালয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর ওি দুই নেতা আওয়ামী লীগ নেতাদের পূনর্বাসিত করতেই বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে তারা ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা কার্যালয় দাবী করছে।

জানা গেছে, গত ৫ই আগস্টের পর গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের লঞ্চঘাট এলাকায় জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু তার তিনতলা বিশিষ্ট ব্যক্তিগত অফিস কার্যালয় কে জেলা কার্যালয় দাবী করে উদ্বোধন করেন। আর চলতি মাসে শহরের গেটপাড়া এলাকায় একটি টিনের ঘরে জেলা কার্যালয় দাবী করে উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির পদত্যাগকারী সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।আর এই দুইটি কার্যালয়ের মাঝখানের দুরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তি। জেলা কার্যালয় কোনটি সেই প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা কার্যালয় হচ্ছে সেটি যেখানে সভাপতি সহ কমিটির সকলে সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু তারা দুজনেই ৫ তারিখের পর গোপালগঞ্জ এসে অফিস দুটি খুলে বিএনপির জেলা কার্যালয় দাবি করছে। তাদের এই দাবি আমরা সমর্থন করি না এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই । কিছুদিনের মধ্যেই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আমাদের জেলা কার্যালয় উদ্বোধন হবে। এবং সেটিই হবে জেলা কার্যালয়।
গোপালগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সুজন সিকদার বলেন, ৫ ই আগস্টের আগে যে সকল নেতাকর্মী আমরা রাজপথে ছিলাম তারা কেউই ওই দুই নেতার রাজনীতি সমর্থন করি না। তারা যে কার্যালয় খুলে বসেছেন, সেখানে আমরা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের কেউ যাই না। তো এককথায় বলা যায় তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবী করছে।
আরও পড়ুন: কোটালীপাড়ায় বাবার বয়সী ঠিকাদারকে প্রকাশ্যে চড় মারলেন
জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে জেলা বিএনপির কোন কার্যালয় নেই, থানা বিএনপির কার্যালয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর ওি দুই নেতা আওয়ামী লীগ নেতাদের পূনর্বাসিত করতেই বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে তারা ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা কার্যালয় দাবী করছে।ওই দুই নেতা বিগত সরকারের নানা সুবিধা নিয়েছে। তারা উভয় আওয়ামী লীগের নেতা শেখ সেলিমের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতো। গত কয়েকবছরে বিএনপির বিভাগীয় কোন প্রোগ্রামে তাদের পাওয়া যায় নি। এমনিকি জেলার কোন প্রোগ্রামেও তাদের পাওয়া যায়নি। এখন তারা দলের সুবিধা নিতে রাজপথে নেমেছে। জেলা কার্যালয় কেন্দ্রীয় ভাবে অনুমোদন হয়ে আসে এবং সেখানে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। পুর্নাঙ্গ কমিটি না হলে আহবায়ক কমিটি সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু সেখানে বর্তমান আহবায়ক কমিটি বা জেলা বিএনপির সহযোগী কোন সংগঠন সেখানে যায় না। তাহলে কি ভাবে ওই দুইটি ব্যক্তিগত অফিস জেলা কার্যালয় হয়। তারা তাদের ব্যক্তিগত অফিস খুলে যদি জেলা কার্যালয় দাবী করে তাহলে সেটি জেলা বিএনপি ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখান করে। এবং তাদের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয় জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাবেক পদত্যাগকারী সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, আমি বিগত দুইবারের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলাম। জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলাম। তবে বর্তমান আহবায়ক কমিটি আমার পছন্দ হয়নি যার কারনে আমি ওই কমিটি নিয়ে অনাস্থা দিয়েছি। তবে পদত্যাগ করি নাই। আর বিগত কয়েক বছরে মামলা হামলার জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারি নাই। তবে আমার অফিসটাই জেলা কার্যালয়। কারন আগামী দিনে আবারো আমি সভাপতি হবো। এটি দলের হাইকমান্ড থেকে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তখন আর আমার অফিস নিয়ে কোন বিতর্ক থাকবে না।
এবিষয়ে জানতে জেলা বিএনপি বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুকে কল করা হলে প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে সেই আহবায়ক কমিটি দিয়েই চলছে গোপালগঞ্জ জেলার বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
নিউজরুম / এজেএ