গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর ১০-শয্যা বিশিষ্ট পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নামেই ১০শয্যা। দুইতলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে নেই একটি শয্যাও। ইনডোরে চিকিৎসা দেওয়ার মতো নেই কোন ধরনের ব্যবস্থা। ৪১ বছর ধরে ১০ শয্যার হাসপাতালটি থেকে মিলছে শুধুমাত্র জ্বর ও সর্দির চিকিৎসা।দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে হাসপাতালটি যেন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে! হাসপাতালের মূলভবনসহ আবাসিক ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে আছে ।চারদিকে তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ। বছরের পর বছর জরাজীর্ণ এই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহির্বিভাগে নামমাত্র চিকিৎসা।
স্থানীয়রা বলছেন, কতৃপক্ষের নজরদারি না থাকা ও রাজনৈতিক অবহেলায় বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতাল টি। তবে জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে, নির্দেশ পেলেই সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হবে ।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গার উপর নির্মিত হয় গোপীনাথপুর ১০শয্যা বিশিষ্ট পল্লী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি।হাসপাতালটি নির্মাণ করেন তৎকালীন পাকিস্তান আমলের বানিজ্যমন্ত্রী অহেদুজ্জামান মিয়া। তখন থেকে পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আসছিলেন।কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে অদৃশ্য কারনে বন্ধ হয়ে যায ইনডোরে রোগির সেবা প্রদান প্রক্রিয়া। এরপর থেকে অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে হাসপাতালটি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। কিন্তু ৪১ বছর ধরে এসব রোগীরা শুধুমাত্র জ্বর ও সর্দি চিকিৎসা নিতে পারছে ।
আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে রাতের আধারে মন্দিরে আগুন দিয়ে প্রতিমা পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
হাসপাতালটিতে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের থাকার জন্য আবাসিক ভবন সহ মোট ভবন রয়েছে ৬টি । সেগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে, চারিদিকে তৈরি হয়েছে ভূতুড়ে পরিবেশ।দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মূলভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে যত্রতত্র।বেরিয়ে গেছে ভবনের ছাদের রড।ভবনগুলো এখন মাদকসেবিদের আড্ডাস্থল। এছাড়া রয়েছে পানি ও বিদ্যুতের সংকটও।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে ০১জন চিকিৎসক, নার্স ০৪জন, অফিস সহায়ক ০১জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ০১জন রয়েছে। শুধুমাত্র একবেলা বহির্বিভাগের রোগিদের সেবা দিতে আসেন ডাক্তারসহ কর্তব্যরতরা। যতক্ষণ হাসপাতালটিতে সেবাদিতে থাকেন ততক্ষণই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন তারাও।দ্রুতই ১০ শয্যার হাসপাতালটি সংস্কার করে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
হাসপাতালে জ্বরের ওষুধ নিতে আসা আসমা বেগম বলেন, এই হাসপাতালে আশপাশের দশটা ইউনিয়নের মানুষ এক সময় চিকিৎসা নিতে আসতো।আশির দশকে অদৃশ্য কারনে ইনডোর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষ এখানে আর তেমন আসতো না। তারপরও প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে।কতৃপক্ষের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া দ্রুতই হাসপাতালটির সংস্কার করে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক।
চিকিৎসা নিতে আসা রফিকুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের ভবনগুলো ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখানে জ্বরের চিকিৎসা নিতে আসলেও আমরা ভয়ে থাকি। এছাড়া দুপুরের পরে আর কোন চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আমাদের এলাকাটি ঘনবসতি হওয়ায় চিকিৎসার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এলাকায় দশ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকার পরও আমরা বঞ্চিত।আমরা শুধুমাত্র জ্বর ও সর্দির ওষুধ পেয়ে থাকি। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবী দ্রুতই ভবনগুলো সংস্কার করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে মাদক সহ ছাত্রদল নেতা আটক
গোপিনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ বিশ্বাস বলেন, ১০শয্যা হাসপাতাটিতে ১০টি বেড থাকার কথা। লোকবল, ডাক্তার, পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকার কথা, কিন্তু কিছুই নেই! শুধুমাত্র আউটডোর কার্যক্রমের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। আমরা মোট ২৫ প্রকার রোগের ওষুধ দিয়ে থাকি। কিন্তু মাঝে মাঝে শেষ হয়ে গেলে তখন সংকটে পড়তে হয়।কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করে ওষুধ আনতে হয়।সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। তাই অনেক সময় রোগীরা না পেয়ে অভিযোগ করেন।
গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে আমি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।পরিদর্শন শেষে হাসপাতালটির বেহাল অবস্থা দেখে এসেছি। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানো হবে । সেখান থেকে নির্দেশ পেলেই হাসপাতালটির সংস্কার শুরু করবো।
নিউজ রুম