১২:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

মেডিকেলে চান্স পেয়েও টাকার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে নুরনাহারের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন গোল্ডেন এ প্লাস। উচ্চমাধ্যমিকে ও কৃতিত্বের সাথে অর্জন করেছেন গোল্ডেন এ প্লাস। সর্বশেষ টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে ফরম কিনে অংশগ্রহন করেছেন মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায়। সেখানেও পেয়েছেন সফলতা। তবে মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তার পরিবার। নুরনাহারের বাবা রুকু মল্লিক এলাকায় রাজমিস্ত্রীরির কাজ করেন। দিনে যা আয় তা দিয়েই চলে তাদের চার সদস্যের সংসার।তাঁর পক্ষে মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচ বহন ও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।নুরনাহার অন্তরার এমন সাফল্যে খুশি এলাকাবাসীও। 

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া এলাকার দিনমজুর  রুকু মল্লিক ও গৃহীনি পারুল বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে নুরনাহার অন্তরা প্রথম। ছোটবেলা থেকেই নুরনাহার অন্তরা পড়ালেখায় বেশ মেধাবী । ২০২২ সালে জেলা শহরের সরকারি বীনাপানি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীর্ন হন। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে ফরম কিনে অংশ গ্রহণ করেন। ২০ জানুয়ারি ফলাফল ঘোষণার পর জানতে পারে নুরনাহার সাতক্ষীরা  মেডিকেল কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এখবর জানার পর থেকে নুরনাহারের পরিবার খুশিতে ভাসলেও অর্থাভাবে   ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারী নুরনাহারের ভর্তির শেষদিন।  সরকার ও সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগীতার জন্য আবেদন জানিয়েছেন পরিবার।

আরও পড়ুনঃ ৪১ বছর ধরে ১০ শয্যার হাসপাতালে মিলছে শুধুমাত্র জ্বর, সর্দির চিকিৎসা

নুরনাহার অন্তরা বলেন, আমি সরকারি বিনাপানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হই। ২০২৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিছুদিন আগে জানতে পারি দেশব্যাপী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আমি ফরম  কিনে গত ১৭ জানুয়ারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ২০ তারিখে ফলাফল ঘোষণার পর জানতে পারি আমি সাতক্ষীরা মেডিকেল  কলেজে চান্স পেয়েছি। এ ঘটনায় আমি সহ পরিবার খুশি থাকলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে আমাদের উপর। মেডিকেলে ভর্তি সহ পড়াশোনার যে ব্যয় বহুল খরচ তা আমার পরিবারের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। আমার বাবা একজন দিনমজুর। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমত আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর। আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার হতে চাই, একজন গরিবের ডাক্তার হতে চাই। আমার এই স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায় তার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ তারা যেন আমার পাশে দাড়ায়।

 

নুরনাহার অন্তরার মা পারুল বেগম বলেন, আমার মেয়ে ছোট থেকেই  অনেক মেধাবী ছিল। শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তির চান্স পাওয়ার পরে আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম কিভাবে পড়ালেখার খরচে যোগাবো। তখন ওর মেধা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে আপনার মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যান। তখন স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার মেয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করেছে। কয়েকদিন আগে মেডিকেল  ভর্তির ফরম কেনার আগে আমাকে বলেছিল মা আমি ফরম কিনতে চাই। আমি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে চাই। ফরম কিনে অংশগ্রহণ করার পরে গত ২০ তারিখে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলছে মা আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এই খবর শোনার পরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। আমার মেয়ে ডাক্তার হবে মানুষের সেবা করবে ভাবতেই আমাদের অন্যরকম লাগে। তবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ অনেক হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। কিভাবে এত খরচ চালাবো। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে রাতের আধারে মন্দিরে আগুন দিয়ে প্রতিমা পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা 

নুরনাহার অন্তরার বাবা রুকু মল্লিক জানান, আমি এই বৃদ্ধ বয়সেও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কষ্ট হলেও মেয়ের পড়ালেখা কখনো বন্ধ করিনি। আমার মেয়ে মেডিকেলে পড়ালেখা করবে জানতে পেরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। যতই কষ্ট হোক আমার মেয়েকে আমি একজন ভাল  ডাক্তার বানাতে চাই। আমার মেয়ে যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।

এবিষয়ে নুরনাহারের প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ বলেন, নুরনাহারের এমন সাফল্যে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অভাব অনটনের সংসারেও সে মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এই খবর জানার পর থেকে আমাদের এলাকাবাসীর মধ্যেও একটি খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তবে নুরনাহার অন্তরার পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারনে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি আমরা এলাকাবাসী। কি ভাবে এত ব্যয়বহুল খরচ তারা চালাবে। যদিও আমরা এলাকাবাসী তার পাশে আছি। তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাব।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা দ্রুতই ওই শিক্ষার্থীর  খোঁজখবর নিয়ে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করব।

নিউজ রুম 

footer-area { background: #024f75; }

মেডিকেলে চান্স পেয়েও টাকার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে নুরনাহারের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন গোল্ডেন এ প্লাস। উচ্চমাধ্যমিকে ও কৃতিত্বের সাথে অর্জন করেছেন গোল্ডেন এ প্লাস। সর্বশেষ টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে ফরম কিনে অংশগ্রহন করেছেন মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায়। সেখানেও পেয়েছেন সফলতা। তবে মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তার পরিবার। নুরনাহারের বাবা রুকু মল্লিক এলাকায় রাজমিস্ত্রীরির কাজ করেন। দিনে যা আয় তা দিয়েই চলে তাদের চার সদস্যের সংসার।তাঁর পক্ষে মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচ বহন ও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।নুরনাহার অন্তরার এমন সাফল্যে খুশি এলাকাবাসীও। 

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া এলাকার দিনমজুর  রুকু মল্লিক ও গৃহীনি পারুল বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে নুরনাহার অন্তরা প্রথম। ছোটবেলা থেকেই নুরনাহার অন্তরা পড়ালেখায় বেশ মেধাবী । ২০২২ সালে জেলা শহরের সরকারি বীনাপানি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীর্ন হন। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে ফরম কিনে অংশ গ্রহণ করেন। ২০ জানুয়ারি ফলাফল ঘোষণার পর জানতে পারে নুরনাহার সাতক্ষীরা  মেডিকেল কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এখবর জানার পর থেকে নুরনাহারের পরিবার খুশিতে ভাসলেও অর্থাভাবে   ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারী নুরনাহারের ভর্তির শেষদিন।  সরকার ও সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগীতার জন্য আবেদন জানিয়েছেন পরিবার।

আরও পড়ুনঃ ৪১ বছর ধরে ১০ শয্যার হাসপাতালে মিলছে শুধুমাত্র জ্বর, সর্দির চিকিৎসা

নুরনাহার অন্তরা বলেন, আমি সরকারি বিনাপানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হই। ২০২৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিছুদিন আগে জানতে পারি দেশব্যাপী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আমি ফরম  কিনে গত ১৭ জানুয়ারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ২০ তারিখে ফলাফল ঘোষণার পর জানতে পারি আমি সাতক্ষীরা মেডিকেল  কলেজে চান্স পেয়েছি। এ ঘটনায় আমি সহ পরিবার খুশি থাকলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে আমাদের উপর। মেডিকেলে ভর্তি সহ পড়াশোনার যে ব্যয় বহুল খরচ তা আমার পরিবারের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। আমার বাবা একজন দিনমজুর। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমত আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর। আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার হতে চাই, একজন গরিবের ডাক্তার হতে চাই। আমার এই স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায় তার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ তারা যেন আমার পাশে দাড়ায়।

 

নুরনাহার অন্তরার মা পারুল বেগম বলেন, আমার মেয়ে ছোট থেকেই  অনেক মেধাবী ছিল। শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তির চান্স পাওয়ার পরে আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম কিভাবে পড়ালেখার খরচে যোগাবো। তখন ওর মেধা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে আপনার মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যান। তখন স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার মেয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করেছে। কয়েকদিন আগে মেডিকেল  ভর্তির ফরম কেনার আগে আমাকে বলেছিল মা আমি ফরম কিনতে চাই। আমি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে চাই। ফরম কিনে অংশগ্রহণ করার পরে গত ২০ তারিখে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলছে মা আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এই খবর শোনার পরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। আমার মেয়ে ডাক্তার হবে মানুষের সেবা করবে ভাবতেই আমাদের অন্যরকম লাগে। তবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ অনেক হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। কিভাবে এত খরচ চালাবো। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর।

আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জে রাতের আধারে মন্দিরে আগুন দিয়ে প্রতিমা পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা 

নুরনাহার অন্তরার বাবা রুকু মল্লিক জানান, আমি এই বৃদ্ধ বয়সেও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কষ্ট হলেও মেয়ের পড়ালেখা কখনো বন্ধ করিনি। আমার মেয়ে মেডিকেলে পড়ালেখা করবে জানতে পেরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। যতই কষ্ট হোক আমার মেয়েকে আমি একজন ভাল  ডাক্তার বানাতে চাই। আমার মেয়ে যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।

এবিষয়ে নুরনাহারের প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ বলেন, নুরনাহারের এমন সাফল্যে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অভাব অনটনের সংসারেও সে মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এই খবর জানার পর থেকে আমাদের এলাকাবাসীর মধ্যেও একটি খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তবে নুরনাহার অন্তরার পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারনে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি আমরা এলাকাবাসী। কি ভাবে এত ব্যয়বহুল খরচ তারা চালাবে। যদিও আমরা এলাকাবাসী তার পাশে আছি। তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাব।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা দ্রুতই ওই শিক্ষার্থীর  খোঁজখবর নিয়ে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করব।

নিউজ রুম