১২:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

পাঁচ বছরে ১৫৭ বাংলাদেশি নিহত, টানাপড়েনে শুরু সীমান্ত সম্মেলন

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে আজ সোমবার দিল্লিতে শুরু হতে যাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন। এই সম্মেলনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, অতীতে সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় আনার কথা দিয়েও কথা রাখেনি ভারত। ফলে এখন সময় এসেছে ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলার।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মধুর সম্পর্ক থাকলেও সীমান্তে তা পরিলক্ষিত হতো না। গত পাঁচ বছরে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি। এ কারণে এবারের সম্মেলনে ভারতকে সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তাঁরা।

আরও পড়ুন :গোপালগঞ্জে যুবদলের কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পদবঞ্চিতদের।

সূত্র জানায়, বিএসএফের গুলিতে ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সমঝোতায় আসে। সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর পরও হত্যাকাণ্ড থেমে থাকেনি।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ২০২৩ সালে সীমান্তে ৩১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১৭ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জনকে হত্যা করা হয়। গত পাঁচ বছরে হত্যার শিকার হয় ১৫৭ বাংলাদেশি।

বিজিবি জানায়, সীমান্ত সম্মেলন আজ সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে। বিজিবি প্রতিনিধিদলে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশে নেবে। ভারতীয় পক্ষের নেতৃত্বে থাকবেন বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) দলজিৎ সিং চৌধুরী।

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে বাস-ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ প্রাণ গেল শ্রমিকের

এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সীমান্তে আহত, আটক, অপহরণ, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধ নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ; বিশেষ করে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়াসহ অননুমোদিত অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ ও চলমান অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের নিষ্পত্তি; আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন; জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ; আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়; সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে।

এ ছাড়া আলোচ্য বিষয়ে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন শেষ হবে।

নিউজ রুম

footer-area { background: #024f75; }

পাঁচ বছরে ১৫৭ বাংলাদেশি নিহত, টানাপড়েনে শুরু সীমান্ত সম্মেলন

প্রকাশিত : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে আজ সোমবার দিল্লিতে শুরু হতে যাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন। এই সম্মেলনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, অতীতে সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় আনার কথা দিয়েও কথা রাখেনি ভারত। ফলে এখন সময় এসেছে ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলার।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মধুর সম্পর্ক থাকলেও সীমান্তে তা পরিলক্ষিত হতো না। গত পাঁচ বছরে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি। এ কারণে এবারের সম্মেলনে ভারতকে সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তাঁরা।

আরও পড়ুন :গোপালগঞ্জে যুবদলের কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পদবঞ্চিতদের।

সূত্র জানায়, বিএসএফের গুলিতে ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সমঝোতায় আসে। সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর পরও হত্যাকাণ্ড থেমে থাকেনি।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ২০২৩ সালে সীমান্তে ৩১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১৭ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জনকে হত্যা করা হয়। গত পাঁচ বছরে হত্যার শিকার হয় ১৫৭ বাংলাদেশি।

বিজিবি জানায়, সীমান্ত সম্মেলন আজ সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে। বিজিবি প্রতিনিধিদলে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশে নেবে। ভারতীয় পক্ষের নেতৃত্বে থাকবেন বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) দলজিৎ সিং চৌধুরী।

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে বাস-ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ প্রাণ গেল শ্রমিকের

এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সীমান্তে আহত, আটক, অপহরণ, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধ নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ; বিশেষ করে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়াসহ অননুমোদিত অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ ও চলমান অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের নিষ্পত্তি; আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন; জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ; আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়; সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে।

এ ছাড়া আলোচ্য বিষয়ে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন শেষ হবে।

নিউজ রুম