ভারতের নাগপুরে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে এরই মধ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) নাগপুরের গণেশপেঠ, মহাল ও গান্ধীবাগ এলাকায় তুমুল সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পাথর নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) বিক্ষোভ চলাকালে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানোর ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে, এতে কয়েকজন আহত হন।
নাগপুরের একাধিক এলাকায় কারফিউ
মঙ্গলবার নাগপুর পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, কোটওয়ালি, গণেশপেঠ, তাহসিল, লাকড়গঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সাক্কারদারা, নন্দনবান, ইমামবাড়া, যশোধরানগর ও কপিলনগর থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : উদ্বোধন হলো যমুনা রেল সেতু
মহারাষ্ট্র পুলিশের এক নির্দেশনায় জানানো হয়, আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের কারণে নাগরিক সুরক্ষা আইন (বিএনএসএস)-এর ১৬৩ ধারা অনুসারে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নাগপুর পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র কুমার সিংগল স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় জানানো হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে।
সহিংসতার আগুনে পুড়েছে বেশ কিছু যানবাহন। ছবি: পিটিআই
কীভাবে ছড়ালো সংঘর্ষ?
পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় নাগপুরের মহাল এলাকায় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মূর্তির কাছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দলের দুই থেকে আড়াইশো সদস্য সমবেত হন। তারা আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে স্লোগান দেন এবং প্রতীকীভাবে গোবর ভর্তি সবুজ কাপড় প্রদর্শন করেন।
আরও পড়ুন : সামরিক মহড়ার সময় ভুলবশত বাড়িঘরে বোমা ফেলল যুদ্ধবিমান
পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জন বালদারপুরায় জড়ো হয়, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং জনজীবন ব্যাহত হয়। এর ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে কারফিউ জারি করা হয়।
সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে, ১৪৪ ধারা বলবৎ
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র সিংগল বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। একটি ছবি পোড়ানোর ঘটনার পর উত্তেজনা তৈরি হয়। আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেই এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এটাই বিজেপির লক্ষ্য: সমাজবাদী পার্টি
সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য রাম গোপাল যাদব অভিযোগ করেছেন, ‘বিজেপি এটাই চাচ্ছিল’।
নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ঘৃণা ছড়াচ্ছে: এআইএমআইএম
অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর জাতীয় মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান নাগপুরের সহিংসতা নিয়ে বলেছেন, বিজেপির কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি সবসময় ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করে। ৪০ বছর আগের আওরঙ্গজেবের কবরের ইস্যু তুলে বাস্তব সমস্যাগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন : শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই শেষে চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
প্ররোচনা দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে: কংগ্রেস
মহারাষ্ট্র কংগ্রেস প্রধান হর্ষবর্ধন সাপকাল অভিযোগ করেছেন, কয়েকদিন ধরে রাজ্যের মন্ত্রীরা ইচ্ছা করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছেন। এই ষড়যন্ত্র নাগপুরে সফল হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্যের অভাব, কৃষিঋণ মওকুফের অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ও কৃষকদের আত্মহত্যার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। এসব থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে শাসক দল ধারাবাহিকভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ আজকের ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র: দ্য হিন্দু
নিউজরুম/এমবি